২১ মার্চ ২০২৩ , ৬:১৩:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
কলমে
মোঃ আবদুল রহিম জয়
সাংবাদিক মানবাধিকার কর্মী
রমজানুল মোবারক বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার অনেক বড় নেয়ামত। এই মাসের দিবস-রজনীকে আল্লাহতায়ালা খায়ের ও বরকত দ্বারা পূর্ণ করে রেখেছেন।
তাকওয়া অর্জনের অনুশীলনের জন্য এবং ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সব আমলের জন্য ভরা বসন্ত বানিয়েছেন। এ মাস শুধু একটি মাসই নয়; বরং গোটা বছরের এটা তাপকেন্দ্র।
এ মাস থেকেই মুমিন গোটা বছরের তাকওয়া-তাহারাতের সঞ্চয় গ্রহণ করে। পুরো বছরের ঈমানি প্রস্তুতি এ মাস থেকেই গ্রহণ করে।
হাদিস শরিফের ভাষায়, ‘আল্লাহতায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য এর চেয়ে উত্তম মাস আর নেই এবং মুনাফেকদের জন্য এর চেয়ে ক্ষতির মাসও আর নেই। মুসলমান এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সঞ্চয় করে। ’
নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত এবং মুনাফেকের জন্য ক্ষতির কারণ। -মুসনাদে আহমদ ২/৩৩০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৪০
সহিহ ইবনে খুজাইমাতেও এই হাদিস (হাদিস : ১৮৮৪) শব্দের সামান্য ব্যতিক্রমের সঙ্গে বিদ্যমান রয়েছে।
উপরোক্ত হাদিস থেকে বোঝা গেল যে, রমজানের খায়ের ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকা মুনাফেকির দলিল।
আল্লাহতায়ালা আমাদের নেফাক থেকে রক্ষা করুন এবং মুমিনের মতো এ মাসের ইস্তেকবালের (সাদর সম্ভাষণ ও স্বাগত জানানোর) তওফিক দান করুন এবং মুমিনের মতোই এই মূল্যবান সময়কে কাজে লাগানোর তওফিক নসিব করুন।
আল্লাহতায়ালা যেমন রমজানকে খায়ের ও বরকত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের মৌসুম বানিয়েছেন, তেমনি গোটা বছরের ঈমানি শক্তি সঞ্চয়ের কেন্দ্র বানিয়েছেন। এরই সঙ্গে আরও অনুগ্রহ করেছেন যে, এ মাসে সৃষ্টিজগতে এমন অনেক অবস্থা ও পরিবর্তনের সূচনা করেন, যা গোটা পরিবেশকেই খায়ের ও বরকত দ্বারা ভরপুর করে দেয়।
হাদিস শরিফে এসেছে, এ মাসে আল্লাহর হুকুমে জান্নাতের সব দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। বড় বড় জিন ও শয়তানকে বন্দি করা হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- ‘হে কল্যাণ-অন্বেষী, অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের পথিক, থেমে যাও। ’
এসবের প্রভাবে রমজান মাসে চেতনে বা অবচেতনে ভালো কাজের দিকে আগ্রহ হতে থাকে। সৌভাগ্যশালী ওইসব ব্যক্তি, যারা এই আসমানি প্রেরণাকে মূল্য দেয় এবং সাহস ও হিম্মতের সঙ্গে কর্মের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আমরা যদি রমজানের ফাজাইল সম্পর্কে অবগত হই, তবে বুঝতে পারব রমজান হলো তিজারতের (ব্যবসার) মৌসুম। কিন্তু কোথাকার তিজারত? রমজান হলো আখেরাতের তেজারতের মৌসুম। যে তেজারতের মাধ্যমে মানুষ আখেরাতের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে, যে তেজারতের লভ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতুন নাঈম, যে তেজারতে সফল হওয়া ছাড়া দুনিয়ার সব তেজারতই শুধু ব্যর্থতা ও ব্যর্থতা।
রমজানে দুনিয়াবী তেজারত নিষিদ্ধ নয়, তবে এমনভাবে তাতে মগ্ন হয়ে পড়া যেন এ মাস এই তেজারতেরই জন্য এসেছে- এমনটা ভাবা ঠিক না। বিশেষত ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রমজানের শেষ দশকে যে অবস্থা আমাদের সমাজে পরিলক্ষিত হয়, তা তো খুবই বেদনাদায়ক। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বিক্রিতে মশগুল, আর অন্যরা শুধু পণ্য ক্রয়ে নয়, মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলোর পরিদর্শন ও প্রদক্ষিণে মগ্ন, না ফরজ নামাজের জামাতের গুরুত্ব, না তারাবির জামাতে উপস্থিতি, না পূর্ণ তারাবি পড়ার তওফিক। তেলাওয়াত, তাসবিহ, দোয়া ও রোনাজারির (কান্নাকাটি) তো প্রশ্নই অবান্তর। এছাড়াও রয়েছে অশালীন চলাফেরা, যা রমজানের পবিত্রতাকে নষ্ট করে।
আমাদের মনে রাখা উচিত, প্রকৃতপক্ষে রমজান হলো, আখেরাতের তেজারতের মৌসুম। এ মাসের সময়গুলো খুব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা উচিত। অন্তত ফরজ রোজা এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা তারাবির সঙ্গে সেহরির সময় তাহাজ্জুদ, কিছু পরিমাণে হলেও জিকির ও তেলাওয়াত প্রত্যেকেরই করা উচিত। বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে এতখানি মগ্ন হওয়া উচিত নয় যে, ফরজ নামাজের জামাত ও তারাবি ছুটে যায়। এছাড়া তেজারতে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা এবং সুদ ও জুয়াসহ অন্য সব হারাম কার্যকলাপ থেকে তো সারা বছরই বেঁচে থাকা ফরজ, রমজান মাসে এর অপরিহার্যতা আরও বেড়ে যায়। কেননা বরকতপূর্ণ সময়ের গোনাহও অত্যন্ত কঠিন ও ধ্বংসাত্মক হয়ে থাকে।
তাই আমি দেশবাসীকে আহবান জানাবো, রমজানের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে রমজান মাস পালন করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।