দেশজুড়ে

হাওরাঞ্চলে সবুজ শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।

ডেস্ক রিপোর্ট

১৭ মার্চ ২০২৩ , ৭:৩২:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

বিজয় কর রতন, ষ্টাফ রিপোর্টার কিশোরগঞ্জঃ:- হবিগঞ্জ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,নেত্রকোনা,সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার সংযোগস্থল বিস্তৃর্ন হাওরাঞ্চলের ৫ জেলার এবছর চাউলের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হবে বলে কৃষি অধিদপ্তরথেকে জানা গেছে। ৫ টি জেলার হাওরে হাওরে এখন সবুজের সমারোহ। এসব হাওর অঞ্চলের প্রতিটি মাঠে মাঠে সবুজ ধান গাছ এখন বাতাসে দোলা দিয়ে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। হাওরাঞ্চলের ৫টি জেলা এবছর বোরো আবাদ হয়েছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিনে। বর্তমানে অধিকাংশ বোরো জমিতে এখন ধানের শীষ বেরোনোর অপেক্ষা করছে। স্থানীয় কিষান-কিষানী আর কিছু দিনের মধ্যেই সোনালী ধান কেটে গোলায় উঠাবে,তাদের প্রত্যাশা কোন প্রাকৃতিক দুর্যােগ দেখা না দিলে এই হাওরাঞ্চলে এবারও বোরোর বাম্পার ফলন হবে একই দাবি করছে ৫টি জেলার কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ। কিশারগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন,বাজিতপুর, নিকলী, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ,বানিয়াচং,লাখাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল,নাছির নগর,নেত্রকোনা খালিয়াজুড়ি, মদন,কলমাকান্দা,মোহনগঞ্জ, সুনামগঞ্জের দিরাই,শাল্লা ইত্যাদি হাওর অধ্যুষিত উপজেলার অধিকাংশ আবাদি জমিতেই বোরোর আবাদ হয়ে থাকে এসব এলাকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগই একমাত্র ফসল বোরো উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল এবং জীবিকা নির্বাহ করে থাকে,বাকিরা জেলে,মৎসজীবী,কামার,কুমারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ,এক জরিপে জানা যায়,এলাকার আবাদি ভূমির ৮০ ভাগের মালিক মাত্র ১৪ ভাগ লোকজন,বাকি ২০ ভাগই জমি ছোট, মাঝারি,প্রান্তিক ও বর্গাচাষিরা। একটি মাত্র বোরো ফসল ছাড়া বিকল্প কোন কর্মসংস্থান না থাকার কারনে এসব হাওর অঞ্চলের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষই ভূমিহীন ক্ষেত মুজুর ও শ্রমজীবী। কার্তিক মাসে ধানের বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে বৈশাখ-জোষ্ঠ্য মাসে হাওরের ধান কেটে কৃষকদের গোলায় পৌছানোর পর্যন্ত এসব শ্রমজীবী নর-নারী মুজুরি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে স্থানীয় শ্রমিক ছাড়াও ধান কাটার মৌসুমে উত্তর বঙ্গের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য ক্ষেতমুজুর এ হাওর অঞ্চলে ধান কাটতে আসেন,ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক কারণে এই হাওর অঞ্চলের প্রতিটি হাওরে প্রায় ৬ মাস বর্ষার পানি আটকা পড়ে থাকে পলি পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে,এছাড়াও প্রায় প্রতিটি হাওরের পাশেই রয়েছে কোন না কোন নদী,খাল,বিল বা বৃহৎ জলাভূমি, আর এসব জলাশয় থেকে সেচের পানি সরবরাহ করা হয়। যদিও এবছর কোথাও কোথাও সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছিল।এই হাওর অঞ্চল উৎপাদিত বোরো ধানে স্থানীয় খাদ্য চাহিদা পূরণ করে একটি বড় অংশ জাতীয় খাদ্য ভান্ডার যোগান হয়ে থাকে। তবে এ অঞ্চলের জমি গুলো অধিকাংশই নিমাঞ্চল হওয়ায় এবং নদী গুলোর তলদেশে ভরাট হয়ে পড়ায় প্রায়ই কয়েক বছর পর পর ধান কাটার মৌসুমে আগাম বন্যায় ফসল তলিয় যায়। তখন ঋণের বুঝা মাথায় নিয়ে কৃষকদের পথে বসতে হয়। নতুন করে আরও ঋণর ফাঁদে আটকা পড়তে থাকেন। বিশেষ করে স্থানীয় মহাজন ও বিভিন্ন এনজিওর কাছ এসব বিপদ গ্রস্থ কৃষক জিম্মি হয়ে পড়েন।সরকারি ভাবে কৃষকদের জন্য কষি ঋণ পাওয়ার জটিলতা ও অপ্রতুলতার কারণে কৃষকরা বাধ্য হয়েই এনজিও এবং মহাজনদের দ্বারস্থ হতে হয়। এভাবে অনেক গরিব চাষি শেষ পর্যন্ত ভূমিহীন পরিণত হয়। বিস্তৃর্ণ এ হাওর অঞ্চলের বড় হাওর, বড়গোপ,বিলবল্লী,গায়েলা,মকুরা,লুগ্রা, মুগ্রা,কালনী,ছাইনা,এলংজুরী,ঘাগড়া,ঢাকি,ধনপুর, মৃগা, পাহারপুর, বদলপুর, দিরাই, শাল্লা, খালিয়াজুড়ি, বামৈই, ডুবাজাইল, কাকুরীয়া, শরীফপুর ঢালা কান্দি, লাখাই, নাছিরপুর, চাতল পাড়, ভলাকুট, মাছমাসহ প্রতিটি হাওরই বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে হাওর পাড়ের একাধিক কৃষকরা জানান। এবছর আবাদকৃত ধানের মধ্যে ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-২৯ হীরা-সুপার হাইব্রীড,বিআর ১৪ এবং ব্রিধান ৫৮সহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,কিশোরগঞ্জ,হবিগঞ্জ ও ব্রাম্মন-বাড়িয়া,নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ৫টি জেলায় প্রায় ৮লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ ব্যাপার ব্রাম্মন-বাড়িয়া জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান,এবছর ১ লাখ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর বোরো জমিন আবাদ হয়েছে এবং চাউল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে ফলনও বাম্পার হবে বলে তিনি আশাবাদী। হবিগঞ্জের কৃষি অধিদপ্তরর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, হবিগঞ্জ জেলাতে এবছর ১ লাখ ২২ হাজার ৪২০ হেক্টর বোরো জমিনে আবাদ হয়েছে। এবং চাউলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৩ মেট্রিক টন। কিশোরগঞ্জের কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুস সাত্তার জানান,এই বছর কিশোরগঞ্জ জেলার বোরো জমিন আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে এবং চাউলের লক্ষ্যমাত্রা আছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন। সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ- পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম, জানান, এবার এই জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিনে বোরো আবাদ হয়েছে এবং চাউলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন। নেত্রকোনা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ- পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান,এই জেলাতে এবছর বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে এবং চাউলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন। ৫ জেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকদের দাবি এই বছর যদি কোন রকম প্রাকৃতিক দুর্যােগ দেখা না দেয় তাহলে এবছর বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন ।

শেয়ার করুন:

আরও খবর

Sponsered content