দেশজুড়ে

ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে বোরো জমিনে বøাষ্ট-চিটা, কৃষকের মাথায় হাত

ডেস্ক রিপোর্ট

১ এপ্রিল ২০২৩ , ৩:০৬:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

বিজয় কর রতন মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলার একমাত্র বোরো উৎপাদিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে বোরো জমিনে বøাষ্ট-চিটা রোগ এবং চিটা দেখা দেওয়ার ফলে উপজেলার বহু কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে অষ্ট্রগামে দুঃসময়ে দেখা পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজনদের এমন অভিযোগ উঠেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। হাওর অধ্যুষিত এই উপজেলার অধিকাংশ আবাদি জমিতেই বোরো আবাদ হয়ে থাকে এসব এলাকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগই একমাত্র ফসল বোরো উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল এবং জীবিকা নির্বাহ করে থাকে,বাকিরা জেলে,মৎসজীবী,কামার,কুমারসহ বিভিন্ন পেশার নিয়োজিত। জানা গেছে ,এলাকার আবাদি ভূমির ৭০ ভাগের মালিক মাত্র ১৫ ভাগ কৃষক। বাকি ৩০ ভাগ জমিই ছোট, মাঝারি, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের। একটি মাত্র বোরো ফসল ছাড়া বিকল্প কোন কর্মসংস্থান না থাকার কারনে এসব এই উপজেলার সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষই ভূমিহীন ক্ষেত মুজুর ও শ্রমজীবী। কার্তিক মাসে ধানের বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে বৈশাখ-জোষ্ঠ্য মাসে হাওরের ধান কেটে কৃষকদের গোলায় পৌছানোর পর্যন্ত এসব শ্রমজীবী নর-নারী মুজুরি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে স্থানীয় শ্রমিক ছাড়াও ধান কাটার মৌসুমে উত্তর বঙ্গের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য ক্ষেতমুজুর এই উপজেলাতে ধান কাটতে আসেন,ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক কারণে এই উপজেলার প্রতিটি হাওরে প্রায় ৬ মাস বর্ষার পানি আটকা পড়ে থাকে পলি পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে,এছাড়াও প্রায় প্রতিটি হাওরের পাশেই রয়েছে কোন না কোন নদী,খাল,বিল বা বৃহৎ জলাভূমি, আর এসব জলাশয় থেকে সেচের পানি সরবরাহ করা হয়। যদিও এবছর অষ্ট্রগামে শুরুতেই কয়েকটি সেচের স্কীমে পানির সংকট দেখা দিয়েছিল।এই তিন উপজেলার উৎপাদিত বোরো ধানে স্থানীয় খাদ্য চাহিদা পূরণ করে একটি বড় অংশ জাতীয় খাদ্য ভান্ডার যোগান হয়ে থাকে। হাওড় উপজেলার জমি গুলো অধিকাংশই নিমাঞ্চল হওয়ায় এবং নদী গুলোর তলদেশে ভরাট হয়ে পড়ায় প্রায়ই কয়েক বছর পর পর ধান কাটার মৌসুমে আগাম বন্যায় ফসল তলিয় যায়। তখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কৃষকদের পথে বসতে হয়। নতুন করে আরও ঋণর ফাঁদে আটকা পড়তে থাকেন। বিশেষ করে স্থানীয় মহাজন ও বিভিন্ন এনজিওর কাছ এসব বিপদ গ্রস্থ কৃষক জিম্মি হয়ে পড়েন।সরকারি ভাবে কৃষকদের জন্য কষি ঋণ পাওয়ার জটিলতা ও অপ্রতুলতার কারণে কৃষকরা বাধ্য হয়েই এনজিও এবং মহাজনদের দ্বারস্থ হতে হয়। বিস্তৃন এই হাওর উপজেলার মিঠামইন ও ইটনার হাওড়,আব্দুল্লাহপুর হাওর,আদমপুর হাওর, কলমা হাওর,কাস্তলের হাওর,পূর্ব অষ্টগ্রামের হাওর,সদরের বড় হাওর,বাংগাল পাড়ার নোওয়া গাওয়ের হাওর,দেওঘরের হাওর বেশ কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখার সময় একাধিক কৃষকেরা জানান, এই উপজেলায় কয়েক শত একক বোর জমিনে বøাষ্ট-চিটা রোগ দেখা দিয়েছে। আর মাত্র কয়েক দিন পরে ঘরে ধান তুলার সময় কিন্তু বোরো জমিনে একদিকে বøাষ্ট-চিটা রোগ দেখা দিয়েছে অন্য দিকে বোরো জমিনে চিটাও দেখা যাচ্ছে এই বছর কি হবে কে জানে? মিঠামইন হাওড় গুলোতে ব্রি-২৮ জাতের ধানের চিটা দেখা দিয়েছে। আগাম জাতের ধানে বøাষ্ট-চিটা রোগ দেখা দেওয়ার কৃষকদের মাঝে দুঃচিন্তা দেখা দিয়েছে। ধানের ফুল বের হওয়ার সাথে সাথে চারা গুলো জমিতেই মরে যাচ্ছে। মিঠামইনের ঘাগড়ার কৃষক হারুন মিয়া জানান ৩ কেয়ার জমি করেছেন খুরাকির লাগি ব্রি-আর ২৮ ধান রোপন করেছিলেন। গত কয়েক দিনে জমির সব ধানের তোর নষ্ট হয়ে গেছে। ফুল বাহির হওয়ার পর নষ্ট হওয়া শরু হইছে। এরকম কথা জানালেন জিরাতি সিরাজ মিয়া, তিনি বড় হাওড়ের ২৮/২৯ মিলাইয়া ১৪ কানি জমি করছেন এর মধ্যে ২৮শে চিটা ধরছে। ফলন ভালো হলে প্রতি কানিতে ১০০মন অয়ত। অহন ১৫ থেকে ২০মন অয় কিনা আল্লাহ জানেন। মিঠামইন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম জানান, এবছর মিঠামইনে ১৫হাজার ৯শত ১০ হেক্টর বোর জমি আবাদ করা হয়েছে এর মধ্যে ৩৯০হেক্টর ব্রি-আর ২৮ বাকি ২৯ সহ ৮৮,৮৯,৯২ ধান করেছেন।তিনি জানান, কৃষকদের অফিস থেকে জমির কোষের সময় কিছু কিছু ঔষদের প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়েছিল কিন্ত কৃষকরা তা মানেনি এসক কারনে বøাষ্ট-চিটা রোগে আক্রান্ত হয়েছে । আমাদের উপসহকারীগন সাবক্ষনিক মাঠে কাজ করছে। অষ্ট্রগামে সদর ইউনিয়নের কলা পাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ বয়সী কৃষক মেনু মিয়া বলেন, তিনি পূর্ব অষ্টগ্রামের খাওরাইলের হাওরে ১৫০ শতাংশ জমিনে ব্রি-ধান ২৮ জাতের বোরো ধান চাষাবাদ করেছিলেন সেই বোরো জমিনে তিনি ৮০-৯০ মন ধান পাবার কথা কিন্তু এই জমিনে বর্তমানে ১০- ১৫ মন ধান পাবে কি না সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন এই বিষয়ে পরামর্শের জন্য কৃষি অফিসের লোকজনের দেখাও পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। খয়েরপুর-আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার হোসেন খান জানান, এই ইউনিয়নের প্রতিটি হাওরে কি রোগ হয়েছে জানি না, তবে ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধান যারা চাষাবাদ করেছিল তারা একমুঠো ধানও কাটতে পারবে না। বৃহস্পতিবার সারাদিন উপজেলার বড় হাওর,পূর্ব অষ্টগ্রামের বাঁধাঘাট, খাওরাইলের হাওর,কাস্তলের বাহাদুর পুর হাওর, ভাতশালার হাওরসহ বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখার সময়ই স্থানীয় কৃষি অফিসের কাউকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে অষ্টগ্রাম উপজেলা বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ১০০ হেক্টর আবাদ হয়েছে ২৪ হাজার ১১০ হেক্টর বোরো জমিনে। এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ সরকার বলেন,উপ-সহকারিদের কে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করার জন্য তবে এখন পর্যন্ত ক্ষতি পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন এখন মাঠে সবাই আছে যদি কেউ মাঠে না থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধানে কিছু সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন আমি এখন কৃষকদেরকে নিয়ে ইটনার হাওরে আছি অষ্টগ্রামের বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন:

আরও খবর

Sponsered content