২৯ জানুয়ারি ২০২৫ , ১০:১৮:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
ফ্যাসিস্ট বিদায়ের পর কর্মস্থলে যোগ দেননি ইউপি সচিব
বাগেরহাট প্রতিনিধি।।
বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মিতালী রায় একটানা দীর্ঘ ৬ মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, গত ৫ জুলাই আওয়ামী সরকারের পতন ও জুলাই বিপ্লবের পর থেকে পরিষদের সচিব কর্ত্তৃপক্ষকে অবহিত না করে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার একটানা দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতি পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তোলে। তার অনুপস্থিতিতে পরিষদের সদস্যরা তার সাথে যোগাযোগের জন্য ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরিষদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন। উপজেলা অফিসও যোগাযোগে ব্যর্থ হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠালেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। পরে উপজেলা থেকে তার অনুপস্থিতির বিষয়টি লিখিত প্রতিবেদন করে জেলা প্রশাসনের নিকট প্রেরণ করেন।
ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা কর্মী মো: সালাহ উদ্দিন জানান, ” গত ৫ আগষ্টের পর থেকে পরিষদের সচিব আসছেন না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। উপজেলা থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও চেষ্টা কোন কাজে আসেনি। পরিষদ থেকেও বহুবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। উনি ফোনই ধরেন না। উপজেলা থেকে একাধিকবার শোকজ নোটিশ পাঠালেও কোন উত্তর আসেনি। তার অনুপস্থিতিতে পরিষদের অধিকাংশ কাজ আটকে আছে। বিগত ৬ মাস ধরে ভিজিডি কার্ডধারীরা চাল পাচ্ছে না। জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধন, ডিজিটাল ওয়ারেশকাম, বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব সুবিধাভোগীরা সেবা না পাওয়ায় তারা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছে। আর মনে করছে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করছি। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত লোককে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে বিদায় করতে হয়। এসব সমস্যা যাতে দ্রুত নিরসন হয়, সেজন্য তিনি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডধারী একজন জানান,” কি যে অসুবিধার মধ্যে আছি, তা আপনাদের কিভাবে বলে বুঝাবো? এমনিতেই আমাদের নুন আনতে পান্তা পুরাই। কোনভাবে ডিবিডাবা দিয়ে চলতে হয়। মাসে ৩০ কেজি ভিজিডি কার্ডের চালে কিছুটা সংসারে হাল পাই। কিন্তু এই ৬ মাস ধরে কোন চাল পাচ্ছি না। বার বার চেয়ারম্যান মেম্বারদের অসুবিধার কথা বললেও কোন কাজ হচ্ছে না।”
খানপুর ইউনিয়নের চুলকাটি গ্রামের নিতাই কৃষ্ণ দেবনাথ জানান,” জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে জরুরীভত্তিতে তার বাবার ডিজিটাল ওয়ারেশকাম খুবই দরকার। তিনি একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছেন এবং ধর্ণা দিয়েছেন পরিষদের উদ্যোক্তা, বিভিন্ন ইউপি মেম্বার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে। এখন হচ্ছে না, পরে যোগাযোগ করেন। সচিব না থাকলে ওয়ারেশকাম দেওয়া যাবে না। এসব করে তিনি এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,” যেদিন হয় হোক, আমার সমস্যার সমাধান আপাতত হচ্ছেনা – আমি তা’ বুঝে গেছি।”
খানপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি খান হাফিজুর রহমান জানান,” ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের অনুপস্থিতির কারণে ইউনিয়নবাসী যেমন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। ভিজিডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারেশকামসহ নিত্য জরুরী কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি দ্রুত চলমান সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট কত্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাওলাদার কবির হোসেন জানান,” গত ৬ জুলাই এর পর থেকে পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মিতালী রায় অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে পরিষদের সকল কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিষদের উদ্যোক্তা কর্মীর সহযোগিতায় কিছু কিছু কাজের মাধ্যমে ইউনিয়নবাসীর সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবুও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সচিবের অনুপস্থিতিতে বেধে আছে। আমরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে অবহিত করলেও কোন সুফল পাচ্ছি না। তিনিও উক্ত পদে একজনকে নতুন দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান।”
পরিষদের সচিব মিতালী রায়ের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠো ফোনে কয়েকদিন ধরে বহুবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জীব দাশ আমার দেশ জানান,” খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মিতালী রায় দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় প্রথমে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের নিকট জমা দেওয়া হয়েছে। কত্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।”
এ প্রসঙ্গে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ডা: মো: ফকরুল হাসান জানান,” ইউপি সচিবের অনুপস্থিতিতে ইউনিয়নবাসীর কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়নবাসীর অসুবিধা দূরীকরণ প্রসঙ্গে তিনি জানান,তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরুর পর উক্ত ইউনিয়নের সচিবের পদে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে।”‘