কৃষি

কিশোরগঞ্জে অভিনব কায়দায় ভরাট হচ্ছে শতবর্ষী পুকুর।

১৩/০৫/২০২৪
কিশোরগঞ্জে অভিনব কায়দায় ভরাট হচ্ছে শতবর্ষী পুকুর।

বিজয় কর রতন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:- প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিকল্পিত চাতুর্যের মাধ্যমে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার একটি পুকুর ধীরে ধীরে ভরাট করছে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের ব্যস্ততম আবাসিক এলাকা নগুয়া চৌরাস্তা (পাঠাগার) মোড়ের শতবর্ষী দৃষ্টিনন্দন পুকুরটি অভিনব কায়দায় ভরাটের মহোৎসব চলছে। ইতোমধ্যে প্রশাসন ও জনগণের দৃষ্টিকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য পুকুরের নগুয়া-হোসেনপুর সড়ক ও নগুয়া-পাকুন্দিয়া সড়কের পাশে টিনের বেষ্টনি তৈরি করে পুকুরটিকে আড়াল করা হয়েছে। এই আড়ালের ফাঁক গলিয়ে স্বার্থাগেনী মহল পুকুরের উত্তর-পূর্ব অংশের অর্ধেকের বেশি পুকুর ভরাট করে দোকানপাট মার্কেট তৈরি করেছে। মার্কেট ও দোকান তৈরি হওয়ায় পুকুরটি আর কারো নজরে পড়ার সুযোগ নেই। এখন দোকানের পেছনে ধীরে ধীরে পুকুর ভরাটের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরো পুকুরটি ভরাট হয়ে স্বার্থায়েদী ফোলকলা পূর্ণ হবে। অথচ জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা অপরাধ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন। ২০১০ সালে সংশোধিত অনুযায়ী যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ রকম সুস্পষ্ট আইনি বিধান থানা সত্ত্বেও আইন প্রয়োগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন ব্যর্থ। আর এই সুযোগে প্রভাবশালীরা নির্বিবাদে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে পরিবেশ- প্রতিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য এলাকাবাসী ও একাধিক স্থানীয় সূত্র জানা যায়, নগুয়া পাঠাগার চৌ-রাস্তা মোড়ের শতাব্দী প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন ৫০ শতাংশের এই পুকুরটি দীর্ঘ বছর ধরে এলাকার সৌন্দর্য ও দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশসহ এলাকার স্বাভাবিক পানীয় ব্যবহার কাজে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছিলো। ২৫ কোটি টাকার মূল্যের এই পুকুরটি ভরাট করার জন্য এলাকার প্রভাবশালী শরীফউদ্দিন ভূঞা গামা গংরা তিন বছর আগে ভরাট করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজনের বাধার কারণে তাদের সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে প্রভাবশালী ও পৌরসভার কতিপয় অসৎ ব্যক্তিদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে তাদের ম্যানেজ করে। পরে সমঝোতা করে তাদের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে অভিনব কায়দায় পুকুরটির দুই তৃতীয়াংশ ভূমি ভরাট করে নগুয়া-হোসেনপুর সড়কের পাড়ে দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে পুকুরটিকে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যায়। পুকুরটি এখন আর সড়ক থেকে দেখা যায় না। পাশাপাশি নগুয়া পাঠাগার মোড় থেকে পাকুন্দিয়া সড়কে টিনের বেরা দিয়ে পুকুরটির চারদিক ঢেকে দেওয়া হয়। গত আড়াই বছর ধরে লোকচক্ষুর আড়াল করে অভিনব কৌশলে পুকুরটির উপরে প্রথমে ভাসমান ঘর নির্মাণ করে। পরে ওই ঘরের নিচে রাত-দিন কৌশলে মাটি ফেলে পুকুরটি ক্রমান্নয়ে ভরাট করে ফেলছে। পুকুরটি ভরাট প্রক্রিয়ার কারণে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানায়। তাছাড়া পুকুরটি ভরাটের ফলে এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর সড়ক সয়লাব হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রভাবশালীদের ভয়ে এলাকার লোকজন কথা বলতে ও প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। তাছাড়া শরীফ উদ্দিন ভূঞা গামার রয়েছে আরও ছয় ভাই। তারা সবাই এলাকায় বেশ প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী মুখ খুলতে সাহস করেন না। কিশোরগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শরীফ সাদী বলেন, পুকুরটি কিশোরগঞ্জ শহরবাসীর অহংকার ছিলো। পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রভাবশালীদের অর্থে বিনিময়ে পুকুর ভরাটের পক্ষে নিয়ে পুকুরটি ভরাট প্রায় শেষ পর্যায়ে। সংশ্লিষ্টদের নিরবতা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। পুকুরটির অস্তিত্ব না থাকলে এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর মারাত্মক নেতাবাচক প্রভাব পড়বে। এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এলাকাবাসীরা জানায়, এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই। বরং তারা পুকুর ভরাট নিয়ে রহস্যময় ভূমিকা পালন করেন। তারা মুখে বলে কোনো অবস্থাতেই পুকুর ভরাট করা যাবে না। আবার প্রশাসনকে নিয়ে বাধা দিতেও আসে না। অভিযুক্ত শরীফ উদ্দীন ভূঞা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পৈত্রিক সূত্রে এই পুকুরের মালিক তিনি। পুকুরটিতে ৬০ শতাংস ভূমি রয়েছে। এরমধ্যে পুকুরের ভূমি ২২ শতাংস। পুকুরের পার ভেঙে গিয়ে পুকুরটি বড় আকার ধারণ করে। পৈত্রিক সম্পতির মালিক হিসেবে পুকুরটি ভরাট করছেন। এতে অন্য কারো সমস্যা হায়েছে বলে তার জানা নেই। পরিবেশ আইন অনুয়ায়ী পুকুর ভরাট করা যায় না-এমন প্রশ্নের জলালে তিনি বলেন, তা তার জানা নেই এবং তিনি আইন অমান্য করবেন না কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, যারা পুকুর ভরাট বন্ধ করার কথা যেমন পরিবেশ অধিদপ্তর, পৌরসভার ও অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব পুকুর ভরাট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় বলেই শহরে পুকুর ভরাট বন্ধ হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ জানান, পুকুর ভরাটের মাধ্যমে যে বা যারা শ্রেণি পরিবর্তন করার কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, পৌর সভার কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জন-প্রতিনিধি পুকুর ভরাটের সাথে জড়িত নয়। কোন কোন রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা অর্থ আদান-প্রদানে জড়িত থাকতে পারে।

তবে, পুকুরটির অর্ধেক অংশ ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে বাকি অংশ রক্ষা করতে হলে সম্মিলিতভাবে নাগরিক সমাজকে মাঠে নামতে হবে। কারণ জেলা-জরিমানা করার ক্ষমতা তার নেই। পৌরসভার লোকজন গেলে তাদের হুমকি-ধামকি ও ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়।

বার্তা প্রেরক
বিজয় কর রতন
দৈনিক সমকাল
মিঠামইন কিশোরগঞ্জ
মোবাইল:০১৭২৪৩৬২৭৪৪

শেয়ার করুন:

আরও খবর

Sponsered content