দেশজুড়ে

বরুড়ায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও সাহস গুণীজন সম্মাননা ২০২৩

মোঃ আসাদুজ্জাম

১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১০:৫৭:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বরুড়ায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও সাহস
গুণীজন সম্মাননা ২০২৩

সাইদুজ্জামান ভুইয়া

১৮ ডিসেম্বর সোমবার বিকেল ৩ টায় কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের সিংগুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত সাহস এ ছিলো মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও গুণিজন সম্মাননা ২০২৩

সাহস এর পরিচালক খায়রুল এনাম আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উন্নয়নের রুপকার উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, ধেরেরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান ও ঝলম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ ফোরকান হোসেন মজুমদার।

সমবেত জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং সকল শহীদ স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাহস এর প্রধান সমন্বয়কারী সবুর বাদশা। বক্তব্য রাখেন সাহস স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ আক্তার চাঁপা ও সিংগুর সুধী সংঘের সভাপতি ইদ্রিস মিয়া।
বক্তারা সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন সাহস একটি প্রগতিশীল চিন্তাধারাকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে সম্মুখ পানে। সাহস এর রয়েছে স্কুল, লাইব্রেরি, প্রকাশনা,সাহস সঞ্চয় প্রকল্প ও সাহস হলিডে হোমস। একই বৃন্তে অনেক ফুল। বক্তারা সাহস এর প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা রতন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন এই গুনী মানুষটির উদ্যোগে আজ এই গ্রামের মানুষের মধ্যে শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে। বক্তারা সকল অভিভাবক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ সকল স্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন সাহস এর যাত্রাপথে আপনাদের সম্পৃক্ততা না থাকলে সাহস আজ এতটা পথ আসতে পারতো না। শিক্ষার মান উন্নয়নে সকলকে সাথে নিয়ে সাহসের সাথে পথ চলা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।

অনুষ্ঠানে ৪ জনকে সাহস গুণিজন সম্মাননা ২০২৩ প্রদান করা হয়। সম্মাননা পেয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ নুরুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোস্তফা কামাল। শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মোঃ মাসুদ মজুমদার ও সাংবাদিকতা পেশায় বিশেষ অবদানের জন্য মোঃ কামরুজ্জামান জনি।
প্রধান অতিথি গুণিজনদের হাতে সাহস গুণীজন সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।

এ সম্মান প্রাপ্তিতে অনুভূতি প্রকাশকালে সমাজের এই দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিকরা বলেন – সাহস আমাদের যে সম্মাননা দিয়ে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মানুষের জীবনে এ ধরণের সম্মাননা যেমন আনন্দের তেমনি আগামীর পথচলার অনুপ্রেরণা। মুক্তিযোদ্ধারা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বলেন দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। আমরা জানতাম না আমাদের ভাগ্যে কি লেখা ছিলো। আমরা আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের চিরতরে হারিয়ে যেতে দেখেছি। হাসিমুখে তারা মৃত্যুকে বরণ করেছেন, এই দেশ মাতৃকা র জন্য। তাঁরা আরো বলেন বিজয় এমনি এমনি আসেনি। এর জন্য আমাদের রক্ত ঝরাতে হয়েছে, মা বোনদের সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। তাঁরা সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহবান জানান। পরিশেষে তারা সাহসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল্লাহ মীর তাঁর অনুভূতি ব্যাক্ত করেন।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন – যারা এই আয়োজনের পিছনে যারা কাজ করছেন তাদের কে ধন্যবাদ । তিঁনি আরো বলেন সাহসের অগ্রগতি দেখে আমি অভিভূত। সাহস তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে যাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমরা আপনাদের সাথে আছি। সাহসের যে প্রকাশনা আছে সেখানে ইউনিক এডুকেশনের কথা বলা হয়েছে। আমরা ইউনিক এডুকেশন চাচ্ছি। সরকারি স্কুলের পাশাপাশি কেজি স্কুল গুলোকে আমরা সরকারি নিবন্ধনের মধ্যে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের সার্কুলার দেয়া হয়েছে এবং সার্কুলার অনুযায়ী যে নিয়মনীতি ও শর্তগুলো আছে। আমার মনে হয়েছে সাহস স্কুল সে সকল শর্ত পূরণ করে অবস্থান করছে। সাহস স্কুল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে আমরা যত দ্রুত সম্ভব সাহস স্কুলকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসবো। আর যখনই নিবন্ধন হয়ে যাবে ঠিক তখনই প্রশিক্ষণ সহ অন্যান্য বিষয় যা লাগবে সেটি স্কুল পেয়ে যাবে। আমরা শিক্ষকদের কারিকুলাম প্রশিক্ষনের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিবো। প্রধান অতিথির এমন কথায় শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকার মানুষ কারতালি দিয়ে উল্লাস করেন। একটি গ্রামের মধ্যে এমন একটি স্কুল পরিচালনা করা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। সাহস স্কুল বরুড়ার ইতিহাস, আমি যতদিন এখানে আছি সাহসের সাথে থাকবো আর এখানে না থাকলেও যেখানেই থাকি সেখান থেকেও সাহস এর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে পাশে থাকবো।
উক্ত অনুষ্ঠানে স্কুলের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক শাহনাজ আক্তার এবং শ্রেষ্ঠ ছাত্র হিসেবে আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াছিন প্রধান অতিথির কাছ থেকে ক্রেস্ট গ্রহন করেন। সভাপতির অনুমতি ক্রমে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শেষ হয় এবং দ্বিতীয় পর্বে সাহস স্কুল ও সাহস কালচারাল সেন্টারের শিক্ষার্থীরা ছড়া কবিতা পাঠ, গান, নাচ এবং ছোট্ট নাটিকা ‘প্রতিবাদ’ মঞ্চস্থ করে। দর্শকবৃন্দ দারুন ভাবে উপভোগ করেন। এ ছাড়াও কবিতা আবৃত্তি করেন আজাহার সুমন, সংগীত পরিবেশন করেন সবুর বাদশা। এরপর সংগীত পরিবেশন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত নিয়ে লেখাপড়া শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত গুনী মানুষ নূরিতা নুসরাত খন্দকার সংগীত পরিবেশন করেন। পাশাপাশি কুমিল্লা থেকে আগত শিশু নৃত্য শিল্পী অনুশ্রী পাল দর্শক স্রোতার মন কেড়ে নেয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুমিত্রা রানী দাস ও সবুর বাদশা। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন স্কুলের শিক্ষকবৃদ।

শেয়ার করুন:

আরও খবর

Sponsered content