৫ এপ্রিল ২০২৩ , ৩:১০:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
মুকুল বসু ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পুরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বাবুর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা। সোমবার বিকালে পুরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ জন ইউপি সদস্য স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগপত্র প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করেছেন। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক।
অভিযোগে বলা হয়, পুরাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বাবু ফকির নিজের পরিষদের ইউপি সদস্যদের সাথে কোন মিটিং না করে তার নিজ ক্ষমতাবলে সব কাজ ইচ্ছামত করে অর্থ আত্মসাত করছে। এসব বিষয় ভুক্তভোগী ইউপি সদস্যরা তার কাছে জানতে চাইলে তিনি (ইউপি চেয়ারম্যান) বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে কোনো বরাদ্দ নেই। বিভিন্নভাবে হুমকি-থামকি দিয়ে তিনি বলেন, পরিষদে কিছু নেই, তোমরা (ইউপি সদস্যরা) কেন পরিষদে আসো, তোমাদের আর পরিষদে আসার দরকার নেই।
২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিষদের বরাদ্দকৃত টিআর, কাবিটা, ওয়ান পার্সন, উন্নয়ন, হাট-বাজার ও এডিপিসহ কোন প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত করেননি। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাতা ও ডিপ টিউবয়েল চেয়ারম্যান তার নিজের ইচ্ছামত দিয়ে থাকেন। বর্তমানে দুলালি পাকা রাস্তা হতে ছোট কুমারদিয়া কালী মন্দির পর্যন্ত কাবিটা প্রকল্পের চলমান কাজ শ্রমিক দিয়ে করার কথা থাকলে ভেকু (খননযন্ত্র) দিয়ে অবৈধভাবে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা হলেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহাদৎ হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ফায়েক মোল্যা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মহিদুল আলম বকুল, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জিয়াউর রহমান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আনিচুর রহমান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. খোকন মিয়া, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মজিবর মোল্যা, ১ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মতিয়ার রহমান প্রমূখ।
অভিযোগকারীদের মধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আনিচুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আতাউর রহমান বাবু ফকির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা অনিয়ম, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছে। কোনো কাজই তিনি অনিয়ম ছাড়া করেন না। ইউপি সদস্যদের পরিষদ থেকে ভাতার টাকা দেওয়ার কথা, তাও তিনি দেন না। তিনি সব সময় ভয়-ভীতি দেখিয়ে সব বরাদ্দ লুটে খায়। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিকার চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ৮ জন সাধারন সদস্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের কয়েকটি দপ্তর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান আমাদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বাবু ফকির বলেন, নগরকান্দায় প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রাম্যদলাদলি রয়েছে। আমার ইউনিয়নেও দলপক্ষ আছে। আমার পরিষদের ১২ জন ইউপি সদস্যদের মধ্যে ৮ জন আমার বিপক্ষের। আর ৪ জন আছে আমার পক্ষে। অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা প্রতিপক্ষের ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগে যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি তোলা হয়েছে তা সব মিথ্যা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগটি তদন্ত করার পর সব সত্যতা বেরিয়ে আসবে। আর আমি কাউকে হুমকি বা ভয়-ভীতি কখনো দেখায়নি। নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. মঈনুল হক বলেন, পুরাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বাবু ফকিরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাকে উভয়পক্ষের সঙ্গে বসে অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।