২ এপ্রিল ২০২৩ , ১:৩৬:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ মামুন অর-রশীদ,
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে রিক্সা চুরি যাওয়ার পরে ৩৯ জন মানুষ রিক্সা কিনে দিতে চেয়েছে রিক্সাচালক তফিজুলকে। এ ঘটনায় কোনটা রেখে কোনটা নেবো সেটার জন্য মহাসংকটে পরতে হয় সেই রিক্সা চালককে।
শনিবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে গড়েয়া বাজারে একটি দোকান থেকে ব্যবসায়ী সৌরভ সেই রিক্সাচালক তফিজুলের হাতে অটোরিক্সা তুলে দেন তার হাতে।
শুক্রবার(৩১ মার্চ) বিকেলে আছরের নামায পড়তে শহরের হাজীপাড়া ফেয়ার হাসপাতালের সামনে রাখা অটোরিকশা হারিয়ে ফেলে তফিজুল ইসলাম। একমাত্র জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন তিনি। তবে ঘটনাটি ফেসবুকে প্রচারের পরে আধাঘণ্টার মধ্যেই ৩৯ জন রিক্সা কিনে দেবার ইচ্ছে প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছে।
জানাগেছে, তফিজুলের রিক্সা হারানোর পরে কান্নাকাটি করার বিষয়টি ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট করেন স্থানীয় সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু। এর পর থেকেই সেই সাংবাদিক ও রিক্সাচালকের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন সমাজের মানবিক মানুষেরা। আধাঘণ্টায় ৩৯ জন সেচ্ছাসেবক মানুষ রিক্সা কিনে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে করে উপস্থিত অনেকেই বিস্মিত হয়ে যায়।
রিক্সা চালক তফিজুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ, দিঘিয়া পারকুন্ডা গ্রামে। তফিজুল বলেন, আমি দিনমজুর রিক্সাচালক। আমার চারটি মেয়ে রয়েছে। দুই মেয়ের বিয়ে দিলেও আরও দুই মেয়ে ও স্ত্রী সহ আমার চার সদস্যের সংসার। এই সংসারে আমি একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। লোনের উপরে নেয়া চুরি যাওয়া রিক্সাটি ছিলো আমার একমাত্র অবলম্বন। আজ আছরের নামায পড়তে রিক্সা রেখে একটি হাসপাতালের নিচতলার জামাতে শরিক হই। তবে বের হয়ে দেখি রিক্সাটি আর নেই।
রিক্সা কিনে দিতে চেয়েও সুযোগ না পাওয়া সমাজসেবক সামসুজ্জোহা জানান, সমাজে ভালো মানুষ আর নেই, এ যেনো আমাদের নিত্য প্রবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এখনও সমাজের একটি বড় অংশই যে মানবিক, তার প্রামণ পাওয়া গেলো রিক্সা চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
ঘটনাটি ফেসবুকে শেয়ার করা ব্যক্তি সাংবাদিক তানু বলেন, ঘটনাটি ঠিক আমার বাসার সামনেই ঘটেছে। আমি বাসা থেকে বের হলে তফিজুলকে কান্না করতে দেখি। বিষয়টি দেখে আমার খুবই খারাপ লাগে। চার কন্যার জনক একজন রিক্সাচালকের পরিস্থিতি খুবই দুঃখজনক ছিলো। ভেবেছিলাম ফেসবুকে প্রচার করে কিছু কিছু টাকা সংগ্রহ করে তফিজুলকে একটি রিক্সা কিনে দেয়ার ব্যবস্থা করবো। তবে পোষ্ট করার আধাঘণ্টায় আমাদের সাথে ৩৯ জন যোগাযোগ করে রিক্সা কিনে দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। বিষয়টি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তবে সবার আগে যোগাযোগ করার সুবাদে স্থানীয় ব্যবসায়ী সৌরভের মাধ্যমে সাহায্যের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক সৌরভ বলেন, ইফতার করার মুহূর্তে আমি তানভীর সাংবাদিকের ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেখতে পাই। সেখানে এক রিক্সাচালক রিক্সা হারিয়ে কান্নাকাটি করছে। বিষয়টি আমাকে বেশ নাড়া দেয়। তাই তৎক্ষণাৎ আমি তানু সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে রিক্সার ব্যবস্থা করে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করি। শুনেছি অনেকেই সাহায্যে এগিয়ে আসতে চেয়েছে। এমন বিষয় আমাদের সমাজে মানবিকতার উদাহরণ। এই মহৎ কাজে নিজেকে রাখতে পেরে ভালো লাগছে।