২৫ মার্চ ২০২৩ , ৮:১৩:০০ প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের নবসৃষ্ট ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউপি চেয়ারম্যান, ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়নের সভাপতি /সম্পাদক,ধর্মীয়,সামাজিক সংগঠন,প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ, ইমাম,পৌরোহিত্য, বাজার পরিচালনা পর্ষদ, সর্দার, মাতবরদের সাথে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম কবিরের সমন্বয় না থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে অপরাধ মুলক কর্মকান্ড। সম্প্রতি ঈদগাঁওয়ের বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনার জেরে চেয়ারম্যান, মেম্বার, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
বিতর্কিত কয়েকটি ঘটনায় সম্প্রতি ওসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় হাজার হাজার জনগণ। উদ্ভট পরিস্থিতে চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের সাথে জরুরি বৈঠকে বসেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এ বৈঠকটি হয় বলে নিশ্চিত করেন জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ।
ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, ওসি গোলাম কবির ঈদগাঁও থানায় যোগদানের পর থেকে ৫ ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় না করে ইচ্ছে মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে। কোন ওসি থানায় যোগদানের পর এলাকার জনপ্রতিনিধি, সমাজ প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠন, ইমাম, পৌরহিত্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় সভা করে সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কাজ করার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু এই ওসি গোলাম কবির ঈদগাঁও থানায় যোগদানের পর থেকে কারো সাথে সমন্বয় সাধন না করে গুটি কয়েক দালালের মাধ্যমে ঈদগাঁওর মানুষ কে জিম্মি করে রেখেছে।
চেয়াারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ আরো বলেন, থানায় যোগদানের পর থেকে একের পর এক হত্যাকান্ড, মাদকের ছড়াছড়ি,
ডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন,নির্বাচনী একটি মামলায় তিনি অভিযুক্ত ছিলেন, অজ্ঞাত কারণে মামলাটি ওয়ারেন্ট হয়। জানতে পেরে বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নেওয়া হয়। পরে জামিননামা (রিকল) থানায় না পৌছায় একজন এসআই পাঠিয়ে কোমরে রসি বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুংকার দেয় এ ওসি।
তিনি আরো বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানরা ইউনিয়ন আইনশৃংখলা কমিটির সভাপতি, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সঙ্গে থানার অফিসার ইনচার্জের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও তিনি একটি বারও আইনশৃংখলা কমিটির সাথে মতবিনিময় সভা করেনি। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জনপ্রতিনিধি -পুলিশ পরস্পর ভাই ভাই। সবাই মিলেমিশে এলাকার আইনশৃঙ্খলা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা, সেখানে ওসি কারো সাথে কোন ধরনের সমন্বয় সাধন না করে একতরফা ভাবে চলে। এভাবেই দূরত্ব সৃষ্টি হলে আইনশৃংখলা পরিস্থতির নিয়ন্ত্রণ করা কোন ভাবেই সম্ভব না।
জানা যায়, মোঃ গোলাম কবির ৫ মাস পূর্বে ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে একের পর এক অপরাধ সংগঠিত হয়ে আসছে ঈদগাঁওতে। বিভিন্ন মামলার আসামীদের সাথে সংখ্যতা গড়ে তুলে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দায়িত্ব পালনে ব্যাপক ব্যর্থতা রয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেন,গত ২১ মার্চ রাতে থানার ৭ পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে বাজারে এক ডাম্পার চালককে ধরে চাঁদা আদায় করছিল, পথচারী হিসেবে জাবের আহমদ জিসান নামের এক ছাত্র প্রতিবাদ করলে তার উপর হামলায় জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। সে সময় সাদা পোশাকে সরকারি পুলিশের গাড়ী নিয়ে তারা কি কারণে বের হয়েছিল তার কোন সদুত্তর ওসি দিতে পারেনি। পরের দিন তোপের মুখে পড়ে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করতে সুপারিশ করেছে ওসি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মিজানুুুর রহমান।
এর আগের দিন জালালাবাদে তুচ্ছ ঘটনায় স্বামীকে না পেয়ে তার স্ত্রী,দুগ্ধপোষ্য দুই শিশুকে ধরে নিয়ে সারাদিন থানায় বসিয়ে রেখে পরে মামলা রেকর্ড করে রাতারাতি আদালতে সোপর্দ করে। আদালতের হাজতবাসের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্রে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠে। এসব ঘটনায় স্কুল ছাত্র ও স্থানীয় জনতা পরপর দুইদিন বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে। পরে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রী, দুগ্ধপোষ্য শিশুদের ধরে এনে আদালতে সোপর্দ করার ঘটনায় জড়িত পুলিশের এসআই গিয়াস উদ্দিন ও ওসি গোলাম কবিরের প্রত্যাহার চেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহা সড়কের ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে ঈদগাঁওয়ের সর্বস্থরের জনতা। একই দিন এসআই গিয়াস উদ্দিনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম।
মানববন্ধন কর্মসূচির সংবাদ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের নজরে আসলে উদ্ভট পরিস্থিতিতে
আন্দোলনকারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের মৌখিক অভিযোগ শুনেন।
পরবর্তীতে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা,জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ, পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ,ইসলামপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল আলম, ঈদগাঁও আওয়ামী লীগের সভাপতি তারেক আজিজ, জালালাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম মোর্শেদ ফরাজী, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম,ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান চৌধুরী, জালালাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ঈদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেল উদ্দিন রাশেদ, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ভট পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান,স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ডাকা হয়। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক করা হয়। বৈঠকে চেয়ারম্যান, রাজনীতিবীদরা ওসির বিষয়ে নানান অভিযোগ তুলে ধরে ধরেন। সবকটি অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে।ওসির সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে সমন্বয় না থাকার বিষয়টি ইতিপূর্বে বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি অবগত হয়েছে। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতারা সমাজের একটি অংশ, পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ শ্লোগানকে ধারণ করে সবার সাথে সমন্বয় সাধন করে চলতে হবে পুলিশকে৷ চেয়ারম্যানরা ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি, তাদের সাথে ওসির দূরত্ব সৃষ্টি হলে কোনভাবেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতারা বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম কবিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।