দেশজুড়ে

তারুণ্যের ভাবনায় একুশ ও বাংলা ভাষা

ডেস্ক রিপোর্ট

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ১২:১৪:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ফারিহা বকর, ইংরেজি বিভাগ-সোহরাওয়ার্দী কলেজঃ

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ইতিহাস আমাদের অহংকার। পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালি একমাত্র জাতি ; যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। একুশের মধ্যে যে বাঙালি জাতির চেতনা ও আবেগ আছে, তা প্রচন্ড শক্তি হিসেবে এখনো রয়েছে। আমাদের অস্থিমজ্জা, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসে যে চেতনা গাঢ় হয়ে মিশে আছে, তাকে ধ্বংস করা অত সহজ নয়।

মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সব জাতি গোষ্ঠীর স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে। বাংলা ভাষা কেবলই বাঙালি বা বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র ভাষা নয়। আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন বাংলাকে সে দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের গৌরবের ইতিহাসকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই গৌরবের।
তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া উচিত। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষার প্রতি উদারতা দেখানো, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকুক। ভাষার ইতিহাস, শুদ্ধ চর্চা, মননে ধারণ করার মধ্যেই একুশের চেতনা প্রতিফলিত হোক। বাংলাকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করার চর্চা চলুক। নিজ ভাষাকে ছোট না করে পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শিক্ষা চর্চা অব্যাহত থাকুক।

শংকরী বাড়ৈ শ্রুতি,বাংলা বিভাগ -ইডেন মহিলা কলেজ

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ইতিহাসের এক স্মরনীয় অধ্যায়। আমাদের ভাষা, আমাদের দেশ, আমাদের স্বাধীনতা সব কিছুর পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান একুশে ফেব্রুয়ারির। একুশের চেতনা থেকেই বাংলাদেশের উৎপত্তি ১ অথচ তরুণ সমাজের অধিকাংশই একুশের অবদান সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেনা। যেকারনে আমরা মনে করি কেবল ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ ভোরে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দেবার মাধ্যমেই সম্মান দেখানো শেষ। কিন্তু এই শহীদ মিনার গড়ে ওঠার ইতিহাস বা তাদের বিনিময়ে আমরা কি পেয়েছি তার গুরুত্ব আমরা অনেকেই বুঝিনা।
পৃথিবীতে আর একটিও দেশ নেই-দেশের মানুষ নেই, যারা নিজের ভাষার জন্য রাজপথে প্রাণ দিয়েছে। ভাষাকে কতটা ভালো বাসলে এই ত্যাগ করা সম্ভব তার ধারণা এখনকার তরুণদের নেই। এর অন্যতম কারণ সঠিক ইতিহাস না জানা। যার ফলে বর্তমান প্রজন্ম ইংরেজি ভাষায় কথা বলাকে মনে করে স্মার্টনেস আর ভুলতে বসেছে বাংলা ভাষাকে সম্মান দেওয়া। যা দিন দিন আমাদের ইতিহাসের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তুলবে।

একুশের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারলে তবেই আমরা বাংলা ভাষাকে সম্মান করতে পারব। আর তাই হবে একুশে’র শহীদদের প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা।

অপূর্ব চক্রবর্তী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ

ভাষা হোক দূষণমুক্ত

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই মনে পড়ে ভাষা শহীদের কথা। যারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার জন্যে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিতেও পিছু পা হননি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি সরকারের জারিকৃত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার দাবিতে তৎকালীন ছাত্রসমাজের মিছিলে গুলিবর্ষণের পর নিহত হন সালাম, রবকত, জাব্বরসহ আরও অনেকে নিহত হন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার দাবিতে তারুণ্যের এ আত্মত্যাগ স্মরণীয় হয়ে রইল বিশ্বব্যাপী। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে নানা ভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমাদের ভাষা শহীদের বীরত্ব গাঁথা। এখন তরুণ প্রজন্মের অনেকেই দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলা এবং ইংরেজিতে মিশ্র ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে। অনেকে আবার ইংরেজি হরফেও বাংলা লিখে প্রকাশ করে মনের ভাব সাথে যুক্ত হচ্ছে অনেক ইংরেজিতে সংযুক্ত নতুন নতুন সংক্ষিপ্ত শব্দ। এভাবেই প্রতিনিয়তই দূষিত হচ্ছে আমাদের প্রাণের প্রিয় বাংলা ভাষা। এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের তরুণ প্রজন্মের অঙ্গীকার হোক আর নয় ভাষা দূষণ।

শেয়ার করুন:

আরও খবর

Sponsered content