১৭ মার্চ ২০২৩ , ৬:৩৭:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
আব্দুল লতিফ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ঃ
কম খরচে অধিক ফলন হয় সূর্যমুখীর। তেল জাতীয় এ বীজ চাষ ভালো হওয়ায় সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে টাঙ্গাইলের কৃষক এবং গ্রাম-বাংলার ফসলি জমি। ভোর হলেই মিষ্টি সোনা রোদে ঝলমল করে উঠে সূর্যমুখী ফুলগুলো। দেখে মনে হয় সবুজ পাতার আড়াল থেকে মুখ উঁচু করে হাসছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখী দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এ ফুলের নাম সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখীর বাগানে প্রায় প্রতিদিন চলে প্রজাপতি আর মৌ-মাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্যে খুশি কৃষক, তেমনি মোহিত করছে ফুলপ্রেমী মানুষকে।
সূর্যমুখী শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। বাজারেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। কৃষি প্রণোদনার আওতায় টাঙ্গাইলে চাষ হয়েছে তেলজাতীয় ফসল এই সূর্যমুখী। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় গতবারের ন্যায় এবারও সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়েছে এ জেলায়। এতে খুশি চাষিরাও। তা ছাড়া বর্তমানে আকাঁশ ছোয়া তেলের দাম বৃদ্ধিতে ভোজ্য তেলের চাহিদাও পূরণ করবে এ হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী। তাই কম খরচে ভালো ফলন হওয়ায় দিন দিন সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৩০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও ১২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী। এনিয়ে জেলায় মোট ২৪২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। ১২টি উপজেলার মধ্যে- টাঙ্গাইল সদরে ৪৫, বাসাইলে ৩৫, কালিহাতী ২০, ঘাটাইলে ১৫, নাগরপুরে ১৫, মির্জাপুরে ১৫, মধুপুরে ২০, ভূঞাপুরে ২০, গোপালপুরে ১২, সখীপুরে ১২, দেলদুয়ারে ১৫ ও ধনবাড়ীতে ১৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়।
গোপালপুর পৌরসভার ভূয়ারপাড়া এলাকার বয়োবৃদ্ধ নূরুল ইসলাম, তুলা মিয়া, হাসমত আলী, রাশিদা, জমিলা, রত্নাসহ অনেকেই জানান, জবরদখল হওয়া ১০ একর জমি উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। আরও দখলে খাকা জমিগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের জবরদখলে থাকায় উদ্ধার করতে পারেনি।
ভূঞাপুর উপজেলার গাড়াবাড়ি এলাকার চাষি মুশফিকুর রহমান বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। প্রতিদিন বিকেল বেলায় আমার জমিতে ফোটা সূর্যমুখী ফুল দেখার জন্য দূর-দূরান্ত হতে অনেক দর্শনার্থীরা দেখতে আসত। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলে সময় কাটান বিনোদনপ্রেমীরা। তা দেখে আমার আনন্দ লাগে। তা ছাড়া আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ বছর সূর্যমুখী চাষে ভালো সফলতা আসবে এবং অনেক লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি।
সূর্যমুখীর মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিনোদনপ্রেমীরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখীর মাঠে। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছে। স্থানীয় কৃষকরা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে সূর্যমুখী চাষের জন্য নানা ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন। এ ছাড়া স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছে।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আহ্সানুল হক বাশার বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ২৩০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও ১২ হেক্টর জমি বেশি হওয়ায় জেলায় মোট ২৪২ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৪ হেক্টর বেশি। প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছিল। গত বছর ৪৩৫ মেট্রিকটন সূর্যমুখীর বীজের ফলন পেলেও এ বছর ২৪২ হেক্টর জমি থেকে ৪৪২ মেট্রিকটন সূর্যমুখীর বীজের ফলন পাব বলে আশা করছি।
তিনি আরও জানান, এ বছর জেলায় সূর্যমুখী বেশিরভাগই চাষ করা হাইব্রিড জাতের এবং বাংলাদেশ গবেষণাগার থেকে বারি-১৪ সূর্যমুখীর উৎপাদন বেশি হয়। আর তেলের পরিমাণও বেশি থাকে। সব দিক বিবেচনা করে তেলের চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ডাক দিয়েছেন যে, আমাদের দেশীয় তেল স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। সে লক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় আমরা টাঙ্গাইলে কাজ করে যাচ্ছি এবং সরিষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত তেল জাতীয় সূর্যমুখীর চাষ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।