১৫ মার্চ ২০২৩ , ৬:০২:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ
আবুবকর সিদ্দিক,খুলনা জেলা প্রতিনিধি:
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মানুষের জীবন-জীবিকার সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের মেগা প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন কয়রার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।
অদ্য ১৫ মার্চ বুধবার কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের হলরুমে কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধের মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন দাবিতে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়। নাগরিক সংগঠন ‘কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’ এর আয়োজন করে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেয়াছাদ আলী, খুলনা জেলা আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরাপদ মুন্ডা, উপকূলীয় উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান কমলেশ মন্ডল প্রমুখ।
খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিগত দিনে অনেক সরকার ক্ষমতায় ছিল, কেউ কয়রায় টেকসই বেড়ীবাঁধের উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি মজবুত বেড়ীবাঁধ নির্মানের জন্য ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা রবরাদ্দ পেয়েছে কয়রাবাসী। তবে তার বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। কয়রার অবহেলিত মানুষের কথা বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকসই বেড়ীবাঁধের মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন বলে আশাকরি।
কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেয়াছাদ আলী বলেন, খুলনার সর্ব দক্ষিণের সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা কয়রা উপজেলার মানুষেরা দুর্যোগের আঘাত সহ্য করতে করতে ক্লান্ত। প্রতিবছর বেড়ীবাঁধ ভেঙে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয় মানুষকে। সেই ষাটের দশকের বেড়িবাঁধ প্রায় অর্ধশত বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধের মেগা প্রকল্পের কাজ আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে শুরু করার দাবি জানাই।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, গত ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর কয়রার দুইটি ইউনিয়নে জন্য ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকার টেকসই বেড়ীবাঁধ প্রকল্প অনুমোদনের পর আশার আলো দেখেছিল কয়রার মানুষ। কিন্তু কাজটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবার কথা থাকলেও আজও তা শুরুই হয়নি। এছাড়া কয়রা উপজেলা প্রতিবছর মৎস্য খাত, সুন্দরবন, আংটিহারা কাস্টমস, বৈদেশিক রেমিটেন্স সহ বিভিন্ন খাত থেকে সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করে থাকে। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা উপকূলের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হোক।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ১৯৬০-এর দশকের বাঁধ পরিকল্পনা বর্তমানে কয়রার মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ জোয়ারের চাপে বাঁধ ভেঙে বারবার মানুষ সহায়-সম্বল হারাচ্ছেন। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে টেকসই বেড়ীবাঁধের অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে জোর দাবি জানাই।
অনুষ্ঠানে কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বলা হয়, কয়রার দুটি ইউনিয়নের টেকসই বেড়ীবাঁধের অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে পুরো উপকূলীয় এলাকাকে টেকসই বেড়িবাঁধের আওতায় আনতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষনের জন্য জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) বাঁধের ১০০ মিটারের মধ্যে চিংড়ি বা কাঁকড়ার ঘের তৈরিতে সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এছাড়া কয়রায় নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দাবি জানানো হয়।