আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ শিক্ষকের গড়ে ৫ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে পাঠদান। মাসিক মিটিংএ বলা হয়েছে ২০ জন শিক্ষার্থী হলেই চলবে বিদ্যালয় বললেন, প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন।
সোমবার দুপুর ২টায় সরেজমিনে জেলার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি সরকারি না বেসরকারি চেনার কোন উপায় নেই। নিরব নিস্তব্দ, নেই কোন সাইন বোর্ড। প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকগণ দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। খাবার শেষে ২টা ৩০ মিনিটে কথা হয় প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনের সাথে। প্রথমেই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আঁতকে উঠেন। পরে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়টি সরকারি চলে ২ শিফটে। এখানে মোট শিক্ষক ৬ জন। এর মধ্যে ডিপুটেশনে ২জন। আছেন প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন। খাতা-কলমে মোট শিক্ষার্থী ৫২ জন। হাজিরা খাতা অনুযায়ী উপস্থিত পাওয়া যায় শিশু শ্রেণিতে ৯ জনের মধ্যে ৭ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৭ জনের মধ্যে ৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জনের মধ্য মধ্যে ৫ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৮ জনের মধ্যে ৫ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ জনের মধ্যে ২ জন, পঞ্চম শ্রেণিতে ৫ জনের মধ্যে কোন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। এ দিন মোট উপস্থিতি পাওয়া যায় ২৩ জন শিক্ষার্থীর। এ হিসেবে দেখা যায়, ৪ জন শিক্ষক গড়ে প্রায় ৫ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান করেন।
শ্রেণি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, চতুর্থ শ্রেণিতে ক্লাশ চললেও শিক্ষক নেই। তৃতীয় শ্রেণিতে পাঠদান চললেও শিক্ষিকার সাথে প্রধান শিক্ষক আলাপচারিতায় ব্যস্ত।
মজার বিষয় হচ্ছে, হাজিরা খাতায় দেখা যায়, এ দিন শিশু শ্রেণির হাজিরার দায়িত্বে ছিলেন, শিক্ষিকা রেণু বেগম। তিনি হাজিরা করলেও চলতি ফেব্রুয়ারী মাসে হাজিরা খাতার পাতায় শিক্ষার্থীদের নাম উঠাননি। তৃতীয় শ্রেণির দায়িত্বে ছিলেন, নিলা রাণী। তিনি শিক্ষার্থীদের কোন মাসের হাজিরা করেছেন হাজিরা খাতায় উল্লেখ করেননি। একই অবস্থা চতুর্থ শ্রেণির। এ শ্রেণির দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন। পঞ্চম
শ্রেণির দায়িত্বে ছিলেন, প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন নিজেই। এই শ্রেণির হাজিরা খাতায় চলতি ফেব্রুয়ারী মাসের হাজিরা পাতা সম্পূর্ণ ফাঁকা। শিক্ষার্থীদের নাম হাজিরা কিছুই নেই। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের এমন দায়িত্বহীনতায় ধারণা করা হয় তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। সপ্তাহে কোন একদিন এসে গোটা সপ্তাহের হাজিরা দিয়ে চলে যান।
জানা যায়, এ ক্লাস্টারের দায়িত্বে আছেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সাজ্জাদুর রহমান। তিনিও চলতি বছরে এ পর্যন্ত বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেননি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে এ পর্যন্ত করা হয়নি কোন অভিভাবক সমাবেশ।
হাজিরা খাতাগুলোর বেহাল অবস্থার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন জানান, শিক্ষকদের বার বার বলার পরও কথা শুনছেন না। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বিষয়ে বলেন, মাসিক মিটিংএ বলা হয়েছে বিদ্যালয় ২০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হলেই চলবে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সাজ্জাদুর রহমান জানান, এমন পরিস্থিতির জন্য ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সচেতন মহল বলছেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। এ বিদ্যালয়টির শিক্ষার আমল পরিবর্তন হবে কি না এটি এখন দেখার বিষয়।
এই সাইটে নিজস্ব সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে সংগ্রহীত খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করা হয়। কোনো সংবাদ নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে, অনুগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের প্রকাশিত সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিও কনটেন্ট ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়।