অপরাধ

সীতাকুণ্ডে ৬ মাসে ৬ জাহাজভাঙা শ্রমিক নিহত, আহত ২০

সীতাকুণ্ডে ৬ মাসে ৬ জাহাজভাঙা শ্রমিক নিহত, আহত ২০

মো.ওমর ফারুক রকি
স্টাফ রিপোর্টার

সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা শিল্পে ২০২৪ সালের শেষ ৬ মাসে ১৪টি দুর্ঘটনায় ৬ জাহাজভাঙা শ্রমিক নিহত হন এবং ১৩টি দুর্ঘটনায় ২০ জন শ্রমিক আহত হন। তারমধ্যে শুধুমাত্র ১টি দুর্ঘটনায় অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে ৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। তাছাড়া সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন জাহাজভাঙা কারখানায় ২০১৫ সালের শুরু থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত গত ১০ বছরে ১২৯ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০৫ জন।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) কর্মকর্তা ফজলুল কবির।

রোববার সকালে সীতাকুণ্ডের ইপসা মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিলস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্তের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া সভায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা বেগম, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তাজাম্মল হোসেন, কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আল মামুনসহ বিভিন্ন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে সভায় জাহাজভাঙা কারখানার মালিকদের কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, জাহাজভাঙা কারখানার মালিকদের সভায় অংশগ্রহণের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হলেও তাঁরা সাড়া দেননি বলে জানা যায়।

বিলসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজভাঙা কারখানায় গত ১০ বছরে সর্বোচ্চ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ২০১৯ সালে। ওই বছর ২৩ জন শ্রমিক নিহত ও ৩৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে দুর্ঘটনা কমে আসছিল। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত মাত্র একটি দুর্ঘটনায় একজন শ্রমিক মারা যান। কিন্তু গত জুলাই মাসে পাঁচটি দুর্ঘটনায় আটজন শ্রমিক আহত হন। ৭ সেপ্টেম্বর এসএন করপোরেশন নামের গ্রিন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে একটি দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত ও ছয়জন আহত হন।

ঠিকাদারেরা শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতনও দেন না এমন অভিযোগ এনে সভায় অংশগ্রহণকারী একটি জাহাজভাঙা কারখানার ফোরম্যান মো. জামাল উদ্দিন বলেন, কারখানাগুলোয় ১০০ জন ঠিকাদারের মধ্যে ৯৮ জনই অদক্ষ। তাঁরা বিভিন্ন প্রভাব বিস্তার করে অনিয়মের মাধ্যমে লাইসেন্স করে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ফলে কারখানাগুলোয় দুর্ঘটনা কমছে না। অনিয়মকারী ঠিকাদারেরা শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতনও দেন না। শ্রমিকদের কাজ করার সময় তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টি খেয়াল রাখা হয় না।

শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, গ্রিন শিপইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় ১২ জন শ্রমিক হতাহতের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত না করে কীভাবে গ্রিন শিপইয়ার্ডের সনদ পায়, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ইদ্রিস বলেন, দুর্ঘটনার পর যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, সেখানে কোনো শ্রমিক প্রতিনিধি থাকেন না। ফলে ভুক্তভোগী শ্রমিকের পরিবারের কথা উঠে আসে না।

বাংলাদেশ মেটাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. আলী বলেন, সীতাকুণ্ডে ১৫০টিরও বেশি জাহাজভাঙা কারখানা রয়েছে। তবে চালু আছে মাত্র ২৪টি। বাকি কারখানাগুলো অলস পড়ে আছে। সরকারের উচিত ওই কারখানাগুলোকে সক্ষম মালিকের কাছে ইজারা দেওয়া। তাহলে হাজার হাজার শ্রমিক আর বেকার হতেন না। তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। সে সময় মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল; কিন্তু পাঁচ বছরে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এবার নতুন কমিশন গঠন করে মজুরিকাঠামো বাস্তবায়ন করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ সময় ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, দুর্ঘটনার পর সঠিক তথ্য দিতে চান না মালিকপক্ষ। আবার দুর্ঘটনার তদন্ত করে কারণ জানা গেলে, সেটি সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ না করার জন্য মালিকপক্ষ চাপ প্রয়োগ করে।

সভায় তপন দত্ত বলেন, মতবিনিময় সভায় সুপারিশমালা যথাযথ ফোরামে তিনি তুলে ধরবেন। জাহাজভাঙা কারখানার সমস্যা নিয়ে কোনো সেমিনার হলে মালিকপক্ষকে আনা সম্ভব হয় না। ফলে সমস্যার কোনো সমাধান হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

শেয়ার করুন:

আরও খবর

Sponsered content