সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার কিশোরগঞ্জঃ:- কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার ওসি মোহাম্মদ মনসুর আলী আরিফের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ উঠেছে। এক. ষাইটধারের সোহেল মিয়া মোবাইল মেরামত করেন। গত বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ তাঁকে চোরাই ফোন বেচাকেনার অভিযোগে আটক করে। তাঁকে ছাড়তে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়। কয়েক দফায় ওসিকে এক লাখ টাকা দিতে হয়। সোহেলের স্ত্রীর ভাই মাছের খামারি সুলতান মিয়া বলেন, ‘আমি ওসিকে প্রথমে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে থানা থেকে শ্যালককে ছাড়িয়ে আনি। পরে উপপরিদর্শক (এসআই) তরিকুল আরো ৬০ হাজার টাকা চান। তিন দফায় ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি।’ দুই. আঠারবাড়িয়া গ্রামের প্রয়াত তাহেরউদ্দিনের ছেলে নূর ইসলাম পারিবারিক কলহের জের ধরে ছোট ভাইকে আহত করেন। পুলিশ খুন করার অভিযোগে নূরকে আটক করে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর। তিন দিন হাজতে রেখে নির্যাতন করা হয়। নূর বলেন, ‘এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলে ওসি আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেন। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য গিয়াস উদ্দিন।’ তিন. সাজনপুর দক্ষিণহাটির দিনমজুর রুবেল মিয়া (২৯) জানান, গত জানুয়ারিতে থানার এক কর্মকর্তা এসে চুরির অভিযোগ আছে জানিয়ে বলেন, ‘ওসিকে ২০ হাজার টাকা দিলে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।’ পরে ঋণ করে তিনি তাঁর ভাইদের দিয়ে দুই দফায় ওসির হাতে ২০ হাজার টাকা দেন। চার. সাজনপুরের দিনমজুর আপন মিয়ার মা জাহানারা বেগম অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির অভিযোগের কথা বলে ওসি ১১ হাজার টাকা নিয়েছেন। পাঁচ. আঠারবাড়িয়া গ্রামের ইসমাইল মিয়া জানান, তিন মাস আগে বাড়িতে ঘর তুলতে যান। সীমানা নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গ মামলা চলছে তাঁর। ঘর তোলার খবর পেয়ে পুলিশ এসে বাধা দেয়। পরে ইসমাইলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের এক অফিসার তাঁকে মারধর করেন। পরে ওসির হাতে তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পান। ছয়. আঠারবাড়িয়া গ্রামের নাসিমা বেগম জানান, তাঁর ছেলেকে গত বছরের জুনে বাচ্চু মিয়া ও তাঁর ছেলে মারধর করে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলে এসআই ইকবাল তাঁকে থানার দালাল ফিরোজ ওরফে কইট্যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এসআই তিন হাজার টাকাও নেন; কিন্তু মামলা নেননি ওসি। সাত. সাজনপুর দক্ষিণহাটির আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. চান মিয়া গত ৭ ফেব্রæয়ারী তাঁকে, তাঁর মা খেলু বেগম ও স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে পিটিয়ে আহত করেন। এ ঘটনায় টাকা দিতে না পারায় থানায় মামলা করতে পারেননি। আট. ছাতিরচরের কৃষক হারুনুর রশিদ বাচ্চু জানান, তাঁর সঙ্গে চাচাতো ভাইদের একটি জমি কেনা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ভাইদের অভিযোগে পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নেয় গত বছরের ১৭ নভেম্বর। তিনি পুলিশের কাছে আটকের কারণ জানতে চেয়ে পাননি। পরদিন সকালে ওসির কক্ষে তাঁকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। নয়. থানার মসজিদের জায়গায় নির্মিত দোকানপাট ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ওসির বিরুদ্ধে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে ঊর্ধ্বতনরা এসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে যান। দশ. স্থানীয় সাংবাদিক শেখ ওবায়দুল হক সম্রাট বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের জের ধরে থানায় ডেকে নিয়ে ওসি আমার মুঠোফোন কেড়ে নেন। ২০ দিন পর ফেরত দেন।’ নিকলী থানার ওসি মোহাম্মদ মনসুর আলী আরিফ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগকে বলছেন ‘ভুয়া’। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ওসির বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ থাকলে যে কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে পারে। আমার দরজা সবার জন্য খোলা রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ অনুসন্ধান করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’